অফিসের বস তূনীর চ্যাটার্জী, ওনার p.a. মালবিকা কে তলব করলেন। মালবিকা তাড়াতাড়ি
চলে গেলেন বসের কেবিনে।
আমাকে ডেকেছেন স্যার?
ও হ্যা মলি ,গতকাল তোমাকে একটা দরকারি ফাইল দিয়েছিলাম, ওটা আমার এখনি দরকার। ok sir আমি আনছি।
মলি মানে মালবিকা মজুমদার, ফাইল টা এনে sir কে দিলো।
বললো sir এটা তো?
তূনীর ফাইল টা খুলে দেখলো, বললো হ্যা হ্যা এটাই। মালবিকা বললো আমি তাহলে আসি sir ।
না তুমি বসো আমার কিছু কথা আছে।
বলুন sir ,
তুমি কাল খুব ভোরে আমার সাথে যাবে?
কোথায় sir?
আমি আগামীকাল নতুন প্রোজেক্ট এর ব্যাপারে রায়পুর যাবো।
তুমি ও যাবে আমার সাথে।ইতস্তত করে মালবিকা
বললো sir আমি বাইরে কখনও অফিসের কাজে
যাইনি এবং রাত ও কাটাই নি।
< বুঝতে তো পারছেন, সাধারণ পরিবারের মেয়ে,
বাবা মা এগুলো পছন্দ করেন না।
তাই ক্ষমা প্রার্থনা করছিsir ।
তুমি কি বলছো মিস মলি, তোমার কোনো ধারণা
আছে?
তোমার কি চাকরি টা দরকার নেই?
নানা sir চাকরি টা না থাকলে অসুস্থ বাবার ওষুধ,ভায়ের পড়াশোনার খরচ, বাড়ি ভাড়া কি করে চলব, একদম মারা যাবো sir ।
তাহলে এই বস্তাপচা সেন্টিমেন্ট ছেড়ে, যা বলছি সেটাই করো।
কাল সকাল সাতটায় হাওড়া স্টেশন গেটে চলে আসবে। আমি গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবো।
অবনত মস্তকে মাথা নাড়িয়ে মালবিকা চলে গেল
বাড়ি ফিরে এসে নিজের মনের সাথে নিজে যুদ্ধ
করলো খানিকটা।
মা বললো মলি আজ এত চুপচাপ কেন রে, শরীর খারাপ নাকি?
না মা তোমার সাথে একটু কথা আছে। কাল আমাকে অফিসের কাজে কয়েক দিনের জন্য বাইরে যেতে হবে।
না গেলে চাকরি টা থাকবে না।তাই আমি কাল ভোরে বেরিয়ে যাবো।
বাবা কে তুমি সামলে নিয়ো।
সে কি মলি সমর্থ মেয়ে বাইরে রাত কাটাবি, লোকে এ নিয়ে নানা কথা বলবে মা।
মা, লোকে আমাদের স্্সার টা চালাবে না।আমার
সমস্যা আমাকেই মেটাতে হবে।
তাই এ নিয়ে আর কথা বাড়িয়ো না।
আমাকে প্যাকি্্ টা সারতে হবে।
আরো পড়ুন, একটি নষ্ট মেয়ের গল্প
পরদিন কথামত নির্দিষ্ট জায়গায় মালবিকা উপস্থিত হলো। যথারীতি বস ও গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
আজ মলি একটা নীল রঙের সালোয়ার কামিজ, আর সাথে গোলাপি রঙের ওড়না, চোখে সানগ্লাস,
হালকা পিঙ্ক কালারের লিপস্টিক, অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল।
বস তূনীর চ্যাটার্জী মলিকে দেখে বেশ মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। তার পর একটু ধাতস্থ হয়ে গাড়ি র
লক খুলে দিল।
মালবিকা পিছনের সিটে বসতে উদ্দত হলো।
তূনীর চ্যাটার্জী বললো, কোন দরকার নেই, আমার
পাশের সিটে বসো আর সিটবেল্ট টা বেধে নাও।
অগত্যা তাই করলো মালবিকা, গাড়ি চলতে শুরু করলো, সুন্দর বিদেশি পারফিউম এর গন্ধ, গাড়ির
মধ্যে। একটা সুন্দর গান বাজতে শুরু করলো।
ভীষণ ভালো লাগলো মালবিকা র।
দারিদ্র্যতার জীবনে এমন মনোরম জার্নি এর আগে কখনও করে নি ও ।
দুজনে ই চুপচাপ। মাঝে মাঝে শুধু তূনীর ওকে
আড়ে আড়ে দেখছিল।
হঠাৎ নিরবতা ভেঙে তূনীর চ্যাটার্জী বললো, আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন?
এই এতদূর আসতে হলো বলে।
মালবিকা বললো না স্যার, পেটে যখন ক্ষিদের
জ্বালা থাকে, তখন কোনো চয়েস না থাকাই ভালো।
কাজের জায়গায় বিকাল ৫টা নাগাদ ওরা পৌঁছে
গেল।আগের থেকে ই দুটো রুমের কথা বলা ছিল।
হোটেল এর দুটো রুমের চাবি দুজন কে দেওয়া হয়েছে।
যে যার লাগেজ নিয়ে রুমে চলে গেল।রুমে গিয়ে
মালবিকা ফ্রেস হয়ে নিল।
একটা ম্যাজেন্টা কালারের শাড়ি পরলো,আর হালকা প্রসাধন।তাতেই ওকে ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছিল।
জানালা দিয়ে যতদূর চোখ যায়, মালবিকা দেখছে,
জায়গাটা বেশ মনোরম।
মনে মনে sir কে ধন্যবাদ দিচ্ছে, প্রথমত sir সত্যিই
ভদ্রলোক, তাই তার জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্তা করেছে, আর দ্বিতীয়ত কাজের সুত্রে হলেও এমন
মনোরম পরিবেশে সে আসতে পেরেছে।
একটু পরেই দরজায় নক, মালবিকা দরজা খুলে
দেখে তূনীর চ্যাটার্জী।
ফ্রেস হয়ে একটা ক্যাজুয়াল ড্রেস পরেছেন। বেশ
লাগছে ওনাকে।অফিসে সব সময় সুট,টাই এধরনের পোশাকে ওনাকে দেখেছে।
আজ একদম অন্যরকম লাগছে। মলিকে বললো
চলো সন্ধ্যা হতে দেরী আছে, আশপাশে একটু
ঘুরে আসা যাক।
মালবিকা ও হাসিমুখে বেরিয়ে পড়লো।গাড়ি না নিয়ে দুজনে হাটা পথ ধরলো। দূরে পাহাড় দেখা যাচ্ছে।
কত নাম না জানা ফুল পথের ধারে ফুটে আছে।
পাহাড়ি নদী কুলুকুলু শব্দে বয়ে চলেছে।
নাম না জানা পাখি গুলো বাসায় ফিরে যাচ্ছে।
সূর্য অস্ত যাবার রক্তিম আলোয় মালবিকা কে ভীষণ সুন্দর লাগছিল।
তূনীর মালবিকা কে না জানিয়ে, কয়েকটা ছবি মোবাইল বন্দি করে নিয়েছে।
হাটতে হাটতে দেখে ছোট্ট একটা চায়ের দোকান।
মালবিকা ভাবলো, অতবড় মানুষ এখানে হয়তো চা খাবেন না।তাই বললো sir আপনি একটু আস্তে
হাঠুন,আমি একটু চা খেয়ে আসছি।
তূনীর অবাক হয়ে বললো, আপনি একা খাবেন, আর আমি?
মালবিকা লজ্জা পেয়ে বললো, আপনি খাবেন sir।
আমি বুঝতে পারি নি।
এই বলে দুটো মাটির ভাড়ে চা আর নাম না চেনা দুটো বিস্কুট দিয়ে দুজনে পরম তৃপ্তি নিয়ে চা খেলো।
ততক্ষণে সন্ধ্যার অন্ধকারে চারিদিক ঢেকে গেছে।
দুজনে তাড়াতাড়ি হোটেলে ফিরে এলো
তূনীর বললো মালবিকা তাড়াতাড়ি ডিনার সেরে
রেষ্ট করো।
সকালে তাড়াতাড়ি বেরাতে হবে কাজের সাইটে।
ঠিক আছেsir বলে রুমে ঢুকে গেলো।
খুব সকাল সকাল উঠে পড়েছে মালবিকা, স্নান সেরে জীনস আর টপ পরে নিল।কাজের সময়
মালবিকা জীনস পরে সাধারণত।
বেশ লাগছিল ওকে। সাথে ছাতা আর সানগ্লাস টা ও নিল। এরা ওর সবসময় সঙ্গে থাকে।
তূনীর চ্যাটার্জী ও সময়মত চলে এল।দুজনে
কাজের সাইডে চললো। সেখানে নতুন প্রোজেক্ট চলেছে, কনট্রাক্টটর, লেবার সবাই কে ঠিক ঠাক সব বুঝিয়ে দিল তূনীর।
মাঝে মাঝেই কিছু লেখালেখি ও ছবি তোলার কাজ মালবিকা করছিল।
আরো পড়ুন, শরীর ১৮+
মাঝে একবার ওরা সামান্য টিফিন আর চা খেয়েছিল।কাজের চাপে কখন যে দুপুর গড়িয়ে গেছে কারোর ই খেয়াল নেই।
হঠাৎ আকাশে ভীষণ মেঘ করে উঠেছে।ভীষণ
বৃষ্টি শুরু হল।মালবিকা চির সঙ্গী ছাতাটা খুলে কোনো রকমে নিজেকে সেফ করলো।
কিন্তু তূনীর ভীষণ ভাবে ভিজে গেল। কিছু করার ছিল না।
একটু পরে বৃষ্টি একটু কমলে ওরা গাড়ি স্টার্ট
দিয়ে বেরিয়ে এল।
তূনীর এর হাচি শুরু হয়ে গেল।চোখদুটো লাল হয়ে উঠেছে।মালবিকা বললো sir আপনি ভীষণ ভিজে গেছেন। শরীর খারাপ হতে পারে।
কিছু মেডিসিন নিয়ে নেবেন।
তূনীর বললো ও আমার অভ্যাস আছে, তুমি চিন্তা কোরো না।
হোটেল এর রুমে যে যার মতো ঢুকে গেলো।
কিছু হালকা টিফিন করলো মালবিকা, সন্ধ্যা প্রায়
হয়ে গেছে।
একটু ফ্রেস হয়ে সোফায় বসে ছিল।
সারাদিনের ধকলে কখন চোখ বুজে এসেছে কে জানে।
হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ার আওয়াজ এ ঘুম ভেঙে গেল।
দরজা খোলা মাত্র হোটেলের একটি ছেলে বললো
ম্যাডাম আপনার সাথে যে sir এসেছেন ওনার
ভীষণ শরীর খারাপ।
জ্বরে বেহুঁশ। আপনি সঙ্গে এসেছেন তাই আপনাকে জানালাম। আপনি একটু দেখুন।
মালবিকা দরজা লক করে, sir এর রুমে ঢুকলো। সাথে হোটেলের ছেলেটি।সত্যিই তূনীর এর জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে, কোন হুশ নেই।
মালবিকা ছেলেটিকে বললো, ভাই কোনো ডাক্তার
পাওয়া যাবে?
ছেলেটি বললো না ম্যাডাম এ তো আর শহর না,
এখানে এখন ডাক্তার পাওয়া সম্ভব নয়।
বললো একটা থার্মোমিটার আর কিছুটা বরফ পাওয়া যাবে ভাই।
ছেলেটি বললো হ্যা দিদি আমি এটা তোমায় দিতে
পারবো।
সারারাত মালবিকা জ্বর দেখে আর জলপট্টি দিতে থাকে। রাতের ডিনার ও করে নি।
ভোরের দিকে জ্বর টা তূনীর এর একটু কম হয়।
চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে মালবিকা ওর পায়ের কাছে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।
তূনীর এর বড় অবাক লাগল, শরীর খারাপ বাড়িতে ও কখনও কখনও হয়েছে, কৈ তার স্ত্রীকে
কোনো দিন দেখেনি এমন করে সেবা করতে পরম মমতায়।
সত্যিই আমার বৈভব আছে ঠিকই তবে পার্থিব
সুখ থেকে আমি বঞ্চিত।
আর এই মলি, একজন বেতনভুক্ত স্টাফ।কিন্তু কত
মায়া মমতা ওর শরীরে।
ও তো একজন আধুনিকা। কত তফাৎ ওর সাথে
আমার স্ত্রীর।
আস্তে আস্তে তূনীর এর মনে মালবিকার জন্য
ভালো বাসা তৈরী হতে থাকলো।
মালবিকার ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেল। দেখল তূনীর উঠে বসেছে।
ব্যাস্ত হয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর কতটা।
না এখন জ্বর নেই।
তবে ভীষণ দূর্বল দেখাচ্ছে।
বললো sir ভীষণ ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন।কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। শুধু ঈশ্বর কে
ডেকে গেছি।
যাক বাবা আপনাকে উঠে বসতে দেখে আমি
নিশ্চিন্ত।
এখন কিছু খাবার খেয়ে নিন।আমি বলছি হোটেলের ছেলেটিকে।
তূনীর আর মালবিকা একসাথে টিফিন করলো আর রেডি হয়ে লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
আসার পথে মালবিকা বললো sir আস্তে গাড়ি চালান, আপনি দূর্বল আছেন এখনো।
তূনীর হঠাৎ করেই মালবিকা কে বললো মলি
আমি বড় একা তুমি আমার জীবনে থাকবে মলি,
আমি তোমাকে ভালো বেসে ফেলেছি।
মালবিকা বললো তা হয় না sir
এ সম্পর্ক বৈধ হবে না, সমাজ বলবে পরকীয়া।
আমি ভারতীয় নারী, আমি পারবোনা অন্যের ঘর
ভাঙতে।
এই ক্ষনিকের ভালো লাগা আমি যত্ন করে রাখবো
Sir ।
নিজের গন্তব্যে মালবিকা নেমে গেল।
তূনীর অপলক দৃষ্টিতে ওর যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকলো।
SHARE THIS: